ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

ঘোষনার ৭ বছর পরেও কার্যক্রম শুরু হয়নি লামার ‘সাঙ্গু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের’

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ

 

বন্যহাতির বিচরনের উপযুক্ত জায়গা হিসাবে সরকার ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ২৮৫নং সাঙ্গু মৌজার সংরক্ষিত ৫ হাজার ৭শত ৬০একর জায়গায় ‘সাঙ্গু বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য’ ঘোষনা করেন। এদিকে ঘোষনার ৭ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত সাঙ্গু বন্যপ্রানী অভয়ারন্য তৈরীতে কোন কার্যক্রম হাতে নেয়নি বনবিভাগ।

বন সংরক্ষন, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকা এর সিএফ মোঃ জাহিদুল করিম বলেন, লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ৫ হাজার ৭শত ৬০ একর জায়গায় তৈরী হওয়ার কথা ছিল ‘সাঙ্গু বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য’। তবে এ অভয়ারণ্য তৈরীতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা এ অর্থ সংগ্রহের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ‘সাঙ্গু বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য’ এর কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছেনা।

স্থানীয়রা জানায়, ইউনিয়নে প্রতিনিয়ত মানুষের বসতি যেমন বাড়ছে তেমনি খাদ্য সংকট বেড়ে চলেছে বন্যহাতিদের। এ কারণে লোকালয়ে বন্যহাতির উৎপাত বেড়েই চলেছে।

বন্যহাতির অবাধ বিচরণ ও অবস্থানের বিষয়ে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, আমার পুরা ইউনিয়নেই বন্য হাতির বিচরণ। বলতে গেলেই হাতির সাথেই বসবাস মানুষের। ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ফকিরা খোলা, পাগলীর আগা, অলি বাপের ঘোনা, ৩নং ওয়ার্ডের মালুমমা, পুড়ার ঝিরি, লক্ষণ ঝিরি, ৪নং ওয়ার্ডের কুমারী এলাকার রাঙ্গা ঝিরি, পাইন্যা ঝিরি, হিমছড়ি, গোয়াইল্যার আগা, ৫নং ওয়ার্ডের বড় ছনখোলা, ফুটের ঝিরি, বাম হাতির ছড়া, ডান হাতির ছড়া ও ৯নং ওয়ার্ডের মুরুং ঝিরি, কাইক্কার ঝিরি এলাকায় কয়েকটি পালে বিভক্ত হয়ে বন্যহাতির দল অবস্থান এবং অবাধ বিচরন করে থাকে। একেক পালে ৩০ থেকে ৩৫টি বন্য হাতি থাকে। এ হাতি গুলোর দীর্ঘ বছর ধরে এ এলাকায় অবাধ বিচরণ করে আসছে। আমার ইউনিয়নের ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড় আর ঝিরি ও ছড়া রয়েছে। এ ছাড়া বড় খাল রয়েছে চারটি। পাশাপাশি ইউনিয়নের ইয়াংছা এলাকার পাশ ঘেষে বয়ে চলেছে মাতামূহুরী নদী। সব মিলিয়ে অন্যান্য এলাকার চেয়ে আমার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে বন্য হাতিদের অবস্থান ও বিচরন ভালো।

তিনি আরো বলেন, প্রতিনিয়ত আমার ইউনিয়নে বসতি এবং বিভিন্ন কোম্পানীদের রাবার বাগান ও ফলদ, বনজ বাগান বৃদ্ধি পাওয়ার বন্যহাতির অবাধ বিচরনে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বন্যহাতিদের আবাসস্থল ও চরম ভাবে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে গত এক দশক ধরে বন্য হাতির দল লোকালয়ে হামলা করছে। ফলে বন্য হাতির আক্রমণে অনেক মানুষ মারা গেছে এবং পঙ্গু হয়ে আছে। পাশাপাশি জমির ফসল ও সৃজিত বাগানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এলাকায় বন উজাড় করে কারখানা নির্মাণ, সরকারী বে-সরকারী আবাসন, রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, ব্যাক্তি মালিকানা বাগানের নামে সীমানা প্রাচীর ও কাঁটা তারের বেড়া তৈরি করে হাতি চলাচলের ক্রসিং বা এক আবাসস্থল থেকে আরেক আবাসস্থলে যাওয়ার করিডর গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই বন্য হাতিদের নিরাপদস্থল ঘোষিত ‘সাঙ্গু বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য’ এর কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান।

এ দিকে লামা বন বিভাগ অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্য হাতির আক্রমনে গত ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৮ জন আহত হয়েছে। এ পর্যন্ত লামা বন বিভাগ মৃত ব্যাক্তির পরিবারকে ২০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেন। বাকি ব্যাক্তিদের টাকা প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানায়।

লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বন্য হাতিদের নিরাপদস্থল তৈরীতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বন অধিশাখা-২ এর এক প্রজ্ঞাপনে গত ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল পার্বত্য বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ২৮৫নং সাঙ্গু মৌজার সংরক্ষিত ৫ হাজার ৭শত ৬০একর জায়গায় ‘সাঙ্গু বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য’ ঘোষনা করা হয়। সরকার বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী(সংরক্ষণ)(সংশোধন) আইন ১৯৭৪ এর ধারা ২৩(৩) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের গেজেট বিজ্ঞপ্তি নং- পবম(শো-৩)/১১/৯৩/১৯০ তারিখঃ ০৭/০৩/১৯৯৬ মূলে এ‘সাঙ্গু বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য’ ঘোষনা করেন। সরকার এই অভয়ারন্য তৈরীর মাধ্যমে সংরক্ষিত বনভূমির উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং পর্যটন সুবিধাদি প্রদানে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

পাঠকের মতামত: